বাবা

যে শৈশব ভুলে যেতে চায় তরী, সেই শৈশবে সে বাবাকে ভালোবাসত। বাবার সাইকেলের সামনের রডে বসেই টো টো ঘুরে বেড়ানো। বাবার কাছেই ঝোড়া-ভরা আবদার। মায়ের খাঁ খাঁ শাসনের একপাশে বাবার একফালি প্রশ্রয়ের মরুদ্যান। রোববার টিভিতে অ্যালিস যখন জাদু-গর্তে ঝাঁপ দেবে দেবে, সেই সময় বাবা গলা-খাঁকারি দিয়ে বলত, ‘ঠিক আছে, আর অঙ্ক করতে হবে না। আজকের মতো ছুটি।’ রান্নাঘর থেকে মা ছুটে আসত। উত্তেজনায় হাতের খুন্তি নড়ত এদিক ওদিক। ‘একদম না, প্র্যাক্টিস করুক। সবসময় ওর তীরে এসে তরী ডোবে।’

বোধ

সে ছিল এক বাপের একমাত্র ছেলে। শহরে পৌরসভার ভিতরে এক বিঘা জায়গা জুড়ে তাদের বসত ভিটা। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মা-ও নাই। এক বিঘে জমির ওপরে তাদের মূল বাড়ি বাদ দিয়ে সেমি পাকা টিনের ঘর আছে চারটা। বাবা ওগুলো ভাড়া দিত। সেই ভাড়ার টাকাতেই তাদের সংসার চলত। জামালির মাথায় লেখা-পড়া কিছু ঢুকল না। ম্যাট্রিক পাশটাও করতে পারল না। বয়স একুশ হতে না হতেই বাপ বিয়ে দিয়ে দিল লম্বা চওড়া দশাসই চেহারার জামালের। আর এই বিয়েটাই কাল হলো।

হাতিজোতদার, দেশকাল এবং মাতব্বরনামা

দোলং নদীর পাড়ে নন্দকুমার দেউনিয়ার বাড়িতে কুশান পালার আসর ছেড়ে আসবার কালে মাঘমাসের শীতের জাড়ে ঈষৎ বিচলিত হলেও একসময় দোলগোবিন্দ ধনি নিজেকে সামলে নিয়ে কুশায়ায় স্থিরচিত্রের মতো দাঁড়িয়ে থাকা তার দুধবর্ণ ঘোড়াটির পিঠে চেপে বসেন। তখনো তার সমস্ত শরীরে মিশে আছে কুশানের সুর, খোসা নাচের স্পন্দনগুলি। শীতকুয়াশায় ছুটে চলে দোল ধনির নির্জন অশ্বটি আটপুকুরির ধনিবাড়ির দিকেই। এই দৃশ্যে হয়তো একটা দার্শনিকতা থাকে। থেকেই যায়।

ধর্মবক ও অন্যান্য কবিতা

শীতকাল জাঁকিয়ে বসেছে, গরুগুলো স্যুয়েটার পড়ে সকালের
রোদে চিবুচ্ছে খড়। গরুর মালিক লোকটি গেঁয়ো আর
গোবেচারা। তাই চাইছি, শহরের কফিশপ থেকে কেউ ধোঁয়া
ওঠা কয়েক মগ গরম কফি এনে গরুদের দিক।

ন্যারেটিভ : রীতি ও নির্মিতি

শিল্পের মূলে আছে ন্যারেটিভ। কবিতা-নাটক-গল্প-উপন্যাস-মহাকাব্য থেকে চিত্রকলা-সিনেমা সবকিছুর মধ্যে ন্যারেটিভ থাকে। এই কারণে ন্যারেটিভ যদি গল্প হয় তাহলে আমরা বলতে পারি শিল্প-সাহিত্যের সবচেয়ে আদি বিষয় হলো গল্প। গল্প দিয়েই সাহিত্যের শুরু। শুধু সাহিত্য না সবধরনের শিল্পফর্মের মূলে আছে গল্প। চিনুয়া আচেবে বলছেন, মানুষ হতে হলে অবশ্যই তার একটা গল্প থাকতে হবে। মানুষের সেই গল্পটা সভ্যতার […]

নুসরাত নুসিনের কবিতা

হরিণের খেত দেখেছি পৌঁছেছি, তবু পৌঁছানো গেলো না, দুলে ওঠা অঢেল ধ্বনিটির কাছেহাওয়ায় হাওয়ায় একবার তবে বেরিয়ে পড়া যাক কোমলডাঙার দিকেচমকিত পড়ে আছে হরিণের খেত। আজ মাঠে শীত নেই, অনেক স্লোগানপ্রলম্বিত হলে জমে ওঠে পাখিবাসনার সাধনা। যার যার নিজের দিকে ফেরা।ও হো ঘাটের বেদনা, ছেয়ে আছে বৃহৎ মধুপুর। সে যে ডুবিয়ে মারে।অনেক গানের পর থেমে […]

নাস্তিক বিজ্ঞানী

একজন সাংবাদিক লুইসকে থামিয়ে বললেন, স্যার বিজ্ঞানের কণা নিয়ে আপনার আজকের আলোচ্য বিষয়। আমরা অধির আগ্রহে শোনার জন্যে অপেক্ষা করছি। এখানে কয়েকজন রাজনীতিবিদ, জনগণের নির্বাচিত এমপি এমনকি মন্ত্রীও রয়েছেন। দেশ সেরা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষানুরাগী আছেন। বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্টরা উপস্থিত আছেন আপনার মূল্যবান বক্তব্য শোনার জন্যে। নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের সেরা শিক্ষক ও ছাত্ররা এসেছে অভিজ্ঞতা নিতে। এখন সময় বারোটার অধিক। আপনি মূল বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করলে ভালো হয়।

একটা খুশির দিন

মতিন শেখের কী জানি হয়। মিষ্টির প্যাকেট হঠাৎই খুলে ফেলে। একটা একটা করে মিষ্টি উঠানের সবাইকে দিতে থাকে মানত মানা সিন্নির মতো করে। বড় চমচম… নেবো কি নেবো না করেও সবাই নেয়। কেউ কেউ বলে, মরার বাড়িতে মিষ্টি আবার খাই ক্যামনে?
কিন্তু সবাই খায়। নান্টু ঘোষের সুনাম করে সবাই। জামাই বলে, আবার কি ছিট তুলছেন নাকি মাথায়? এহন মিষ্টি খাওনের সময়?
মতিন শেখ বলে, মাইয়া মরার খুশিতে খাওয়াই বাবাজি। তুমিও খাও। এমন খুশির দিন আমার মাইয়াটার জীবনে আর আসে নাই!

Begin typing your search term above and press enter to search. Press ESC to cancel.

Back To Top
error: Content is protected !!