তখনও সন্ধ্যা ঘনায়নি। বাগদী পাড়ার পুষ্করের বউ গিয়েছিল চরের খালে মাছ ধরতে। বর্ষাকাল। নদীর এখন ভরা যৌবন। সেই যৌবনেরই ছটা ছড়িয়ে পড়ছে নদীর আশেপাশের খালে-বিলে। মোষমরার চরটা ঠিক আজকালকার চর নয়। শোনা যায়, কোন যুগ আগে নাকি বান এসেছিল নদীতে। মাঠঘাট ডুবিয়ে যখন শান্ত হলো নদী, তখন পলি-বালি ফেলে ফেলে নদীটা অনেকদূর সরে পড়েছে। লাগারডাঙার ঘোষদের একটা হালের মোষ চরতে চরতে শক্ত ডাঙা ভেবে বালিতে পা দিয়ে জল খেতে নেমেছিল। আর উঠতে পারেনি মোষটা। ভড়ভড় করে ঢুকে গিয়েছিল নরম দক-মাটিতে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর যখন রাখালের চোখে পড়েছিল, তখন শুধু একটা কালো মাথা দেখতে পেয়েছিল সে।চোখ বুজে ওপর দিকে মুখ তুলে যেন গভীর ধ্যানে মগ্ন। কেউ যেন গলাটি কেটে কাদার ওপর নামিয়ে দিয়ে গেছে।মোষটার মাথার ওপর দু-তিনদিন শকুন উড়েছিল। ভাগাড় খেকো কুকুরগুলো দহে নামতে সাহস পায়নি। দূর থেকে বসে বসেই জীভের জল ঝড়িয়েছিল— এ হলো মোষমরার চরের বৃত্তান্ত।