
বিপন্নতাটুকু নাও; এই নাও ধুলোলীন মুখ।
হে জবাকুসুম, হে জলকোমল, হে পীর-পার্বতী—
নাগরিক অন্ধকারে নিরুপায় বসে আছি একা
মিথুন-রেখার পাশে আমাকেও টেনে নিও তুমি—
(বি)স্মরণ
তোমাকে স্মরণ করি, বিস্মরণে, শোনো—
অজস্র আলোকরেখা জ্যান্তচিতা থেকে
এঁকেবেঁকে যায় চলে কোথা সে সম্মুখে?
কোন সুরে শব্দ-বন্ধে কার গান বোনো?
যেহেতু কিছুই নেই, সমস্ত আঁধার—
থেকে থেকে বোকাবৃষ্টি অমূলক ঝরে
সারারাত জেগে, তবু, প্রচণ্ড নগরে,
ভোর হলো, দেখো, এই মৌন শবাধার!
আমি তবু যাবো, অনু, যাবো ঠিক দেখো—
উত্তরে না থাক যদি, প্রত্যুত্তরে থেকো।
রাখিও
রাখিও আমারে মাগো তোমার ছায়ায়!
রাখিও আঁচলে বেঁধে, ধুধু এ প্রান্তরে
যদি পথে নাহি পাই দিশা; তুলে নিও।
তুমুল বলক শেষে, বর্ষা বৃষ্টি দিও
দিও এক চন্দনের ফোঁটা, এ ললাটে।
আর কত ভাঙনের হবো মুখোমুখি?
ছাই ভস্ম দিও, কাঠ ও কুড়াল দিও
অভিলম্বে দিও এক স্মৃতি-এপিটাফ!
অন্তরে কাঙাল রেখো, পাশে রেখো পথ,
ধবল জ্যোৎস্না রাতে, টের যেন পাই
নূপুরের রিনিঝিনি, কোমল আওয়াজ।
রাখিও আমারে মাগো ছায়া ও মায়ায়।
বিশল্যকরণী, ও মা, যদি নাই পাও
আমারে রেখো না ফেলে, কাছে টেনে নাও।
সম্প্রীতি
নদীর নামে তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম একা
তখনই ঠিক বৃক্ষ হলাম সহস্র প্রশাখা!
নদী কোথায়? ঘুমের ভেতর তুমিও জলভীতি
তুচ্ছ আমার বচন-বাচন বিষণ্ন সম্প্রীতি
তবু যদি নদীর কথায় হারিয়ে ফেলি বাঁক
ডালভাঙা এক শিমুল গাছে মৌন পাখির ঝাঁক—
তখন তুমি ঘুমের ঘোরে আসবে কি আর কাছে?
ঘর বেঁধেছে রাঘব বোয়াল সুন্দরী বৌ-মাছে!
নগর
নগরে, এইভাবে, একা একা ক্ষয়ে যাওয়া আছে—
ক্লান্তি আছে, বিষ ও বসন্ত আছে।
একা একা, আরো গভীর নীরবতার দিকে যেতে যেতে
অকস্মাৎ মনে আসে, সন্ধ্যার কোলাহল
গৃহপূজার ঘন্টাধ্বনি, আর, তুমি, ওদিকটায়—
কান খাড়া করে আমি একান্তে হেঁটে চলেছি।
‘তোমাকে যাপন করি’
এমত সত্যের দিকে, এখনও, মৃত মানুষের মতো চেয়ে আছি—
মুখে জল দিও।
স্বপ্ন
স্বপ্নের ভেতর এতো এতো জেব্র্রাক্রসিং আর
নকশাকাটা ঘর যে,
এইভাবে, একা একা, আর এগোনো যাচ্ছে না।
শহরে বৃষ্টি হচ্ছে—
আয়নায়, জমানো জলে,
একা একাই ভিজে যাচ্ছি সেই থেকে।
ক্রমশ অন্ধকার হয়ে আসছে চারপাশ—
বিলীয়মান ছায়ার শরীর নিয়ে
প্রার্থনায় নতজানু হতে হতে
আমি ঘুমিয়ে পড়ছি।
দিন ক্রমে শেষ হয়ে আসছে; টের পাই।