দাগ ও অন্যান্য কবিতা

উনুনের রক্তরঙে লাল হয়ে ঘেমে ওঠে মুখ
চিড়-ধরা দেওয়ালে সঞ্চিত থাকে হিমঘ্ন অতীত
নিদ্রিত শিশুর মতো আধোলীন স্নেহের দাপটও
ক্ষয়ে যায়, জন্ম তার ছেঁড়ে— থাকে দাগ, চিদাকাশে

প্রাণের সমস্ত কড়া নেড়ে নেড়ে খসে পড়ে যায়
কে রয়েছে? আছে কেউ, পথ রুখে দাঁড়ায় সম্মুখে?
হয়তো দাঁড়ায় কেউ, ধুলোপাশে ছেঁড়া ছাতা ধরে
সহজ জলের ঢঙে অভ্যাসে গড়ায় অবনত

কবর

তখনও সন্ধ্যা ঘনায়নি। বাগদী পাড়ার পুষ্করের বউ গিয়েছিল চরের খালে মাছ ধরতে। বর্ষাকাল। নদীর এখন ভরা যৌবন। সেই যৌবনেরই ছটা ছড়িয়ে পড়ছে নদীর আশেপাশের খালে-বিলে। মোষমরার চরটা ঠিক আজকালকার চর নয়। শোনা যায়, কোন যুগ আগে নাকি বান এসেছিল নদীতে। মাঠঘাট ডুবিয়ে যখন শান্ত হলো নদী, তখন পলি-বালি ফেলে ফেলে নদীটা অনেকদূর সরে পড়েছে। লাগারডাঙার ঘোষদের একটা হালের মোষ চরতে চরতে শক্ত ডাঙা ভেবে বালিতে পা দিয়ে জল খেতে নেমেছিল। আর উঠতে পারেনি মোষটা। ভড়ভড় করে ঢুকে গিয়েছিল নরম দক-মাটিতে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর যখন রাখালের চোখে পড়েছিল, তখন শুধু একটা কালো মাথা দেখতে পেয়েছিল সে।চোখ বুজে ওপর দিকে মুখ তুলে যেন গভীর ধ্যানে মগ্ন। কেউ যেন গলাটি কেটে কাদার ওপর নামিয়ে দিয়ে গেছে।মোষটার মাথার ওপর দু-তিনদিন শকুন উড়েছিল। ভাগাড় খেকো কুকুরগুলো দহে নামতে সাহস পায়নি। দূর থেকে বসে বসেই জীভের জল ঝড়িয়েছিল— এ হলো মোষমরার চরের বৃত্তান্ত।

মিছিল খন্দকারের কবিতা

কী যে সমীরণ, বাঁকা বায়ু বয়, আহা!
যাহাই কুহেলি, কুয়াশাও নাকি তাহা!

সতত সে তপে; ভ্রান্তি-ছলনে ফেলে
যেন মোরা কোনো সাগরদাঁড়ির ছেলে!

আজি শ্যাম-হিয়া উথলি পরানে মেশে
জোড়াসাঁকো থেকে বজরা এসেছে ভেসে?

তমাল রায়ের গল্প : সময়যানের সওয়ার হয়ে বাঁধা ধারনার সঙ্গে এনকাউন্টার

দুই বাংলার লেখালিখির জগতে তমাল রায় সুপরিচিত। তিনি লেখেন কম। প্রকাশিত হয় আরও কম। সেই সূত্রে তাঁর নিজের লেখারা কুলুঙ্গিতে তুলে রাখা যেন পুরনো দস্তাবেজ। দরকার না-পড়লে নেড়েচেড়ে দেখা হয় না। দরকার যে তবু হয়, কেন-না তার গুরুত্ব অপরিসীম। বলা যায়, সম্পাদক সত্তা লেখক তমাল রায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে খানিকটা কোণঠাসা করে দিয়েছে। এ-হেন অবস্থাতেও তাঁর […]

কালা চশমা

আমি একবার কাজ করছিলাম একটা সফটওয়ার কোম্পানিতে। সেইখানের কাহিনি। আগে কখনো বলা হয় নাই। আজ মনে হইতেছে এই কাহিনিটা বলে ফেলি।

কোম্পানিটার নাম না বলি। সফল একটা ব্যবসা হিসাবে তাদের নামডাক আছে। ভালো কাজ করতেছে, ঢাকায় ছিল অফিস। আমি তখন ঢাকায় গেছি, অফিসের কাছেই বাসা নিয়া থাকি।

অফিস শুরু হয় নয়টায়। সকাল সকাল সবাই আইসা গোল হইয়া দাঁড়াইয়া মিটিং করেন, এটা তাদের নিয়ম। আমি এগারোটায় উইঠা অফিসে যাইতাম। গিয়া প্রথমে এইচআরের রুমে বইসা কিছু ফাও আলাপ করতাম। চা খাইতাম, এবং ঘন্টাখানেক পরে নিজের জায়গায় যাওয়া শুরু করতাম।

কবিতাভাবনা মাসুদ খান

কবিতা-অরণ্য হলো সেই রহস্যমেদুর রেইন ফরেস্ট, যেখান থেকে অক্সিজেন নেয় বহু-বহু বিষণ্ন ফুসফুস আর ত্যাগ করে খেদ ও নির্বেদ, গ্লানি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড, এমনকি কখনো-কখনো মনোক্সাইডও। আর সেই বৃষ্টিবন ওইসব বিষ ও বিষাদকে ফের রূপান্তরিত করে ফেলে দ্রুত অম্লজানে। কবিতার রয়েছে সেই অভিনব সালোক-সংশ্লেষণী ক্ষমতা।

মুজিব ইরম-এর কবিতা

রথের দিনে শিমের বিচি গাঁথিয়া দিও সাঁঝে, সেই বিচিতে উঠবে গাছ আমার মনের মাঝে। শিমের গাছে ভরে উঠবে তোমার নয়া ভিটা, সকাল বিকাল মায়ার হাতে দিবা জলের ছিটা। আমি না হয় দূরে বসে দেখবো তোমার কাজ, তোমার হাতে আমিই না হয় ধরবো সবুজ সাজ। কতো কতো ফুল ফুটিবে তোমার আদর পেয়ে, কতো কতো আসবে ভ্রমর ফুলের খবর পেয়ে। ফুলগুলো তো সকাল বিকাল তোমার দয়ায় ফোটে, তুমিও যেনো ফুইটা থাকো মিথ্যে তো নয় মোটে। আমি না হয় শিমের ছায়ায় খুব নিরলে বসে, দেখবো শুধু কেমন করে পাঁপড়িগুলো খসে। সেই না ফলন তুলিয়া নিও তোমার আঁচল ভরে, দেখবো আমি দূরের মানুষ সারা মৌসুম ধরে। সেই শিম রান্ধিবা তুমি দাওয়াত পাইবার আশে, মেকুর হইয়া বইস্যা থাকমু তোমার ঘরের পাশে।

গোপাল কবিরাজ

প্রায়ই মনে হয় আচমকা এসে কেউ পেটের ডান পাশে একটা চাকু ঢুকিয়ে দেবে। প্রায় আট-দশ বছর ধরে এই আতঙ্কটা আমাকে তাড়া করছে। বহুবার, নানান উছিলায় এটাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করি। ভুলে যাইও। আবার কীভাবে কীভাবে যেন ফিরে আসে। এটার শুরু হয়েছিল গোপাল কবিরাজের সাথে দেখা হবার পর থেকে। ছোটপিশির বাড়িতে সেদিন সন্ধ্যায় আমাকে দেখেই তার […]

নিশা

নিশা চলে যাওয়ার পর আমার তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। খাওয়া-দাওয়া আগের মত চলছে, ঘুম আগের চেয়েও দীর্ঘ হয়েছে। বাইরে যাওয়া, অফিস, স্বাভাবিক কাজকর্ম আগের মতই চলছে। কোথাও কোনো ছেদ নেই। কেবল, একটা ঘটনা ছাড়া। আমার সব কথা ফুরিয়ে গেছে। আগের মত বলে যেতে পারি না। যতটুকুই বলি, পেঁচিয়ে যায়। আর বলবই বা কার সঙ্গে? প্রতিদিন অফিস ছাড়া নিয়মিত আর কোথাও, কারো কাছে যাওয়া হয় না। তাই কথা বলার প্রয়োজন পড়ে না তেমন।

সামুদ্রিক

জলে নামতে জানত দেবলীনা। চটিজোড়া খুলে রেখে পোশাকের তোয়াক্কা না করে তড়তড়িয়ে এগিয়ে যেত ঢেউ ভেঙে। সোমক তাকে দেখত অবাক হয়ে। সমুদ্রের বুকের ভেতর মিশে যেতে যেতে দেবলীনা ক্রমশ সমুদ্র হয়ে যেত। কখনো সোমকের হাত ধরে টেনে নামালেও সোমকের শরীরটুকু ভিজত কেবল, দেবলীনার মতো করে জলদেহে ঢেউ হতে পারত না সে। জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে জল দেখত, দেবলীনাকে দেখত। সাগর অধরা থেকে গেল, মেয়েটাও। সে মেয়ে লবণ লবণ… শিখেছে সহজ মিশে যাওয়া… জলসমুদ্রে, জনসমুদ্রে।

Begin typing your search term above and press enter to search. Press ESC to cancel.

Back To Top
error: Content is protected !!